(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক ছিঁচকে চোরের শেষ উপাধি বউ চোরা জাকির(৩৬)। দীর্ঘ ১৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে করা চুরির তালিকায় রয়েছে হাঁস, মুরগী, ছাগল এমনকি গরু চুরির মতো ঘটনা। শুধু তাই নয়, পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরের স্ত্রীকেও চুরি করায় তাকে বউ চোরা বলেই চিনে। সময়ের ব্যবধানে শশুর বাড়ির লোকজন ডাকে জামাই জাকির।
আর ওই চুরি করা স্ত্রী নিয়ে ঘর সংসার করার রয়েছে অভিযোগ। এমনকি পল্লি বিদ্যুৎ এর পূর্বাচল সাইড জোনাল ইনচার্জ মিজানকে ম্যানেজ করে চোরাই সংযোগ নেয়ার রয়েছে অভিযোগ। ওই চোরা জাকির নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল কেশরাবো গ্রামের বাসিন্দা৷
বর্তমানে চুরি করা স্ত্রীর বাড়ি রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া এলাকার ঘর জামাইসে। স্থানীয় সূত্র জানায়, জামাই জাকির তার ছোটবেলা থেকেই চুরি কাজে লিপ্ত।এসব চুরির কারনে তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেয়৷ মাঝে মাঝে ক্ষমা চেয়ে বাড়িতে চলে আসতো৷ আবার গ্রামের লোকজনের বসত ঘরে প্রবেশ করে চুরি করতো৷ এভাবে চুরির মাত্রা বেড়ে গেলে গ্রামে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়৷
তার বয়স যখন ২০ এর কাছাকাছি তখন ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটে পকেট মারা কাজে যুক্ত হলে ওই ঘটনায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তারপর ভুলতা এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়ায় থেকে রিক্সা চালাতো সে। এভাবে রিক্সা চালানোর সময় গ্যারেজ থেকে লাখ টাকার অধিক পার্টস চুরি করে পুলিশের হাতে ধরা খায়। ভুলতার গ্যারেজ মালিক হাশেমের দেয়া মামলায় জেল খাটে সে।পরে জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে পূর্বাচলে রাজমিস্ত্রীর সহকারী ( জোগালী)হিসেবে কাজ নেয় সে। তার প্রধান মিস্ত্রি পূর্বাচলের হাড়ারবাড়ির হযরত আলীর সঙ্গে কাজের সুবাধে তার বাড়িতে যাতায়াত হতো।
ওই সময় পরিচয় হয় হযরত আলীর স্ত্রী শাহেরার সঙ্গে। শাহেরা স্বামী ও সন্তান থাকলেও কৌশলে ফুসলিয়ে পরকিয়ার ঘটনা ঘটায় জাকির। একদিন দিনের বেলায় শাহেরাকে নিয়ে উধাও হয় জাকির । ১ বছর তারা পলাতক থাকে।
এদিকে হযরত আলী তার বউ ফিরে পেতে আইনি আশ্রয় নিলেও শাহেরাকে ফেরাতে পারেনি। সে সময় শাহেরা ও হযরত আলীর সংসারে ১ মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।
পরে জাকিরের সঙ্গে সংসার পাতে শাহেরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা জানান, শাহেরা তার সংসার ছেড়ে জাকিরকে বিয়ে করার খবর পেলে তার বাবা আব্দুল আলীম তাৎক্ষণিক স্ট্রোক করে মারা যায়৷ এরপর লজ্জায় জাকির তার শশুর বাড়ি যায়নি। তাই শাহেরা ও জাকির কাঞ্চনের একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করে৷ সেখানে একটি পাওয়ারলোম কারখানায় চুরি করে ধরা খেলে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। পরে বাধ্য হয়ে শাহেরার বাবার বাড়ি চলে আসে।
প্রথমে ২ বছর ভালোভাবে দিনাতিপাত করলেও শুরু হয় পুরনো পেশায় যোগদান। অতীতের শতাধিক চুরির ঘটনা ছাড়াও গত ১ মাসে ১২টি বাড়িতে চুরি করে সে৷ স্থানীয় সূত্র জানায়, জামাই জাকির চুরি কাজে ওস্তাদ৷ তাকে সহজে কেউ ধরতে পারে না। তবে চুরি যাওয়া মালমাল বিক্রি করলেই ধরা খায়। এমন চুরির ঘটনার মাঝে রয়েছে গোয়ালপাড়ার জুলমতের বাড়ি থেকে২ টি গরু চুরির সময় হাতে নাতে আটক হয়।
একইভাবে একই গ্রামের হাবিলের বাড়ি থেকে রড চুরি, সাবেক ইউপি সদস্য মৃত শামসুন্নাহারের বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল চুরিতে ধরা খেলে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। কাদিরার টেক রিটন মিয়ার বাড়ি থেকে চুরি করলে শালিস বসায় ভুক্তভোগী। পরে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
শুধু তাই নয়, বসত ঘরে চুরি করতে করতে সরকারি মালামাল চুরিতেও হাত দেয় জামাই জাকির। আর তার কোন সহযোগী ছাড়াই এসব চুরি কাজে যুক্ত হয় সে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর অধীনে থাকা পূর্বাচল সাইড অফিসের হেফাজত থেকে (বিদ্যুৎ অফিস থেকে) সরকারী তার(ক্যাবল) চুরি করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা রয়েছে। জাকিরকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী, চুরি করেই চলে জামাই জাকিরের জীবিকা। এমনকি ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে খুঁটি থেকে ক্যাবল কেটে।
এতে মিটার অতিক্রম করে সংযোগ নেয়ায় অবৈধভাবে চালাচ্ছে বিদ্যুৎ লাইন। এসব বিষয়ে পূর্বাচল ইনচার্জ মিজানকে জানালে সে কিছু করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তবে মুঠোফোনে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা মিজানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অবৈধ লাইন কাটতে ম্যাজিস্টেটের অভিযানের প্রয়োজন হয়। আমার কিছু করার থাকে না।
এসব অভিযোগ বিষয়ে জামাই জাকিরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি এক সময় খারাপ ছিলাম, এটা ওটা ধরতাম। এখন আর করি না। তবে আমাকে অতীতের রেকর্ড খারাপের কারনে কিছু হলেই আমাকে দোষ দেয়। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, চুরির ঘটনায় কারো অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর একই ব্যক্তি চিহ্নিত চোর হলে গ্রামের লোকজনের উচিত তাকে আইনে সোপর্দ করা৷ নতুবা তাকে সংশোধন করা৷
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।